গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় হয়: কারণ ও প্রতিকার
|
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব
|
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকেরই অতি পরিচিত একটি সমস্যা। এ ব্যাথা মানুষের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে, কখনো পেটে, কখনো বুকে বা কখনো পিঠে অনুভূত হতে পারে। এই পোস্টে আমরা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় হয় এবং কিভাবে অনুভূতি টের পাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যাতে আপনি আপনার শারীরিক সমস্যার মূল কারণ বুঝতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কোথায় অনুভূত হয়?
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা সাধারণত পেটের উপরের অংশে আর বিশেষ করে নাভির উপরে এবং বুকের নিচে অনুভূত হয়। তবে এই ব্যথা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা প্রধানত যে স্থানগুলোতে হয় তা হল:
1. পেটের উপরের অংশে ব্যথা:
পেটের মধ্যভাগে ব্যথা যেখানে পাকস্থলী অবস্থিত থাকে। মাঝে মাঝে পেটের বাম পাশে অথবা ডানদিকেও গ্যাসের ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
2. বুকের নিচে বা মাঝখানে ব্যথা:
বুকের হাড়ের নিচের দিকে বা মাঝ বরাবর যা বুক জ্বালাপোড়া হিসেবে আমরা ধরে থাকি । অনেক সময় হৃদরোগের ব্যথা ও এভাবে শুরু হতে পারে। 3. পিঠের দিকে ব্যথা:
কখনো কখনো গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা পিঠের দিকে প্রচন্ড অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
ব্যথার প্রকৃতি এবং অবস্থান এক একজন মানুষের একেক রকম হতে পারে এবং এটি কখনো তীব্র আবার কখনো সহনীয় হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার সাধারণ কারণগুলো
1. খাবার খাওয়ার ভুল অভ্যাস
অনিয়মিত খাবার খাওয়া, আবার অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া বা বেশি মাত্রায় ঝাল খাবার গ্রহণ গ্যাস্ট্রিকের প্রধান কারণ হতে পারে। এছাড়াও খাবারের পরপরই শুয়ে পড়া বা তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়াও গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।
2. অম্লের অতিরিক্ত সঞ্চালন
পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অম্ল উৎপাদন হলে তা হজম প্রক্রিয়া প্রভাব ফেলে যা গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা তৈরি করতে পারে। বেশি পরিমাণে চা কফি কোমল পানীয় বা মদ পান করলে অম্লের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
3. দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকা
দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকলে পাকস্থলীতে থাকা অম্ল হজম করার মত কোন খাবার না পেয়ে পাকস্থলীর দেয়ালের উপর প্রভাব ফেলে, যা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। তাই অনিয়মিতভাবে খাবার খাওয়া বা পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও দেরি করে খাবার খাওয়া এ সমস্যাকে আরো তীব্র করে তোলে।
উপরের এই কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং খাদ্য অভ্যাস এ পরিবর্তন আনলে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
1. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
প্রতিদিন তিন বেলা সময়মতো খাবার খাওয়া, কম মসলাযুক্ত এবং সুষম খাদ্য খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাজাপোড়া বা তেলে ভাজা খাবার, ঝাল ও অম্লজাতীয় খাবার না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি কম পরিমাণে কিন্তু বারবার খাবার খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে দেয়।
2. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
দৈনিক কিছুটা শারীরিক ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও হাটা যোগব্যায়াম বা হালকা শরীর চর্চা করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হতে পারে। তাছাড়া স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুবই উপকারী।
3. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিয়মিত দেখা দেয় অথবা ব্যথার মাত্রা তীব্র হয় তবে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। চিকিৎসক সমস্যার লক্ষন দেখে প্রয়োজনে ওষুধ বা চিকিৎসা নির্ধারণ করে থাকবেন। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা থাকলে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের এর পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
উপরের আলোচনাকৃত বিষয়গুলো মেনে চললে আশা করা যায় গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বা সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং ভবিষ্যতে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা কিন্তু এটি জীবনযাত্রার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে তাই আমাদের উচিত খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবেলা করা। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও সঠিক যত্ন গ্রহণের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা নিরাময় এবং এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা সম্ভব। তাই এ বিষয়গুলোর প্রতি যত্নবান হলে আপনি আমি আমরা সকলে সুস্থ জীবন যাপন করতে পারব এবং গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারবো।
যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক দিনের হয় তবে অবশ্যই একজন গ্যাস্ট্রিক বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। স্বাস্থ্যই সম্পদ ❤️।
0 মন্তব্যসমূহ